Header Ads

Image result for header ad

আমার গার্লফ্রেন্ড আনিকা কল দিয়ে বলল, 'কই তুমি?'

গল্প


আমার গার্লফ্রেন্ড আনিকা কল দিয়ে বলল, 'কই তুমি?'

আমি গলার স্বর কিছুটা নিচু করে মিনমিনে গলায় বললাম, 'টয়লেটে।'

-মানে কী! তুমি কী ওয়াশরুমেও ফোন নিয়ে যাও না-কি?

-হুম, ফেসবুক চালাতে চালাতে ঢুকে গেছি।

-ছে..গেছ ভালো কথা, তাই বলে ফোন রিসিভ করে সেটা আবার আমাকে বলাও লাগবে?

-ওমা! আমার কী দোষ। তুমিই না আমাকে দিয়ে সেদিন শপথ করালা আমি যেন কখনো মিথ্যা কথা না বলি..

বুঝলাম না মেয়েটা হঠাৎ এমন রেগে ফোনটা কেটে দিল কী জন্য। অথচ কয়েকদিন আগে আনিকা নিজেই আমাকে বলল, বাবু..তুমি আমার গা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করো কখনো তুমি মিথ্যা বলবা না। আর আমার সাথে তো একদমই না। অথচ তার সে কথা রাখতে গিয়েই আজ!

কয়েকদিন পরের ঘটনা। আনিকা আবার আমাকে ফোন দিল। বলল, 'হ্যালো, তুমি কই? কী করো?'

আমি ফিসফিস করে বললাম, 'চুপ, আস্তে! একটা মেয়ের পিছু নিয়েছি।'

-কীহ্!


২০২০ সালের সেরা একটা সিনেমা


-হুম..কথা বইলো না, মেয়েটা টের পেয়ে যাবে।

-ছি সাদিক ছি! আমি জানতাম তুমি কিপ্টা, মিথ্যা বলো; কিন্তু এখন দেখি তোমার ক্যারেক্টারেও প্রবলেম!

-কী যা-তা বলতেছ এইগুলা?

-আমি যা-তা বলছি? তুমি অন্য একটা মেয়ের পিছনে ঘুরো এটা যা-তা না?

-আরে মেয়েটা আমার অফিসের হারুন ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড। এই মেয়ে না-কি রোজ অন্য আরেকটা ছেলের সাথে দেখা করতে এখানে আসে। হারুন ভাই আমার হাত ধরে রিকোয়েস্ট করে বলল আমি যাতে মেয়েটাকে ফলো করে সঠিক নিউজটা তাকে নিয়ে দেই। আজ সারাটা দিন মেয়েটার পিছু পিছু কাটালাম।

-সেটা আগে বলবা না? তুমি এমনভাবে কথা বলো!

-এমনভাবে আবার কী বললাম? সত্যিটাই তো বললাম।

-উফফফফ..সাদিক!

আরেকদিন বিকেলে অফিসের একটা কাজে উত্তরা গেলাম। কাজ সেরে বের হতেই আনিকা ফোন দিল, 'হ্যালো সাদিক, কী করো?'

আমি কপালের ঘাম মুছতে মুছতে ক্লান্ত সুরে বললাম, 'এই তো কিছু না, একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা নিতে উত্তরা আসছিলাম।'

আরো পড়তে ভিজিট করুনঃ


-কিসের টাকা?

-উমমমমম..তোমাকে তো আবার সত্যিটা বলা লাগবে। কিভাবে যে বলি!

-অবশ্যই সত্যিটা বলবা। বলো, কোনো প্রবলেম নাই।

-আসলে আনিকা, আমাদের ফ্যাক্টরিতে প্রতি মাসে প্রচুর পরিমাণে কেমিক্যাল অতিরিক্ত থেকে যায়। আমি আর হারুন ভাই মিলে বাইরের একজনের কাছে সেগুলা বেচে দেই। সেই টাকাটা নিতেই আসছিলাম।

-কীহ্! তুমি এইগুলা করো? এইরকম চুরি?.

-আস্তে বলো! লোকজন শুনবে।

আনিকা রাগী কন্ঠে বলল, 'শুনলে শুনুক।'

-হুম শুনুক! তোমাকে গতমাসে যে ফোনটা কিনে দিলাম ঐটা এই চুরির টাকা দিয়েই কেনা।

বুঝলাম না হঠাৎ করে আনিকা চুপ হয়ে গেল কেনো। ও বোধহয় ওর মোবাইলটাকে হারাতে চায় না। মোবাইলটাকে বোধহয় খুব ভালোবেসে ফেলেছে।

তার কিছুদিন পর অফিসের একটা কাজে রাজশাহী গেলাম। ফেরার সময় বেশ টায়ার্ড ছিলাম। ঘুমিয়ে পড়ি। আনিকার ফোনে ঘুম ভাঙল।


তোমার জন্য ভালবাসা


-তোমার বাস কই এখন, কী করছিলে?

-একটা মেয়ের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলাম।

-কী বললা! তুমি আমাকে অফিসের কাজের কথা বলে রাজশাহী গেছ এইগুলা করতে? ছি সাদিক! তুমি এতটা নিচ। তুমি এমন হবা আমি জীবনেও কল্পনা করি নাই।

-আরে কী শুরু করলা!

-কী শুরু করলাম মানে! আসলে আমার কপালটাই খারাপ। নইলে কী আর তোমার মতো এমন একটা লুচ্চার সাথে প্রেম করি?

-উফফফফ...থামো তো। আমি ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। আমার ঘারটা গিয়ে পাশের সীটের মেয়েটার উপর পড়ছে। মেয়েটাও ঘুমাচ্ছে; তাই টের পায়নি।

-ঘারটা পড়ছে না তুমি লুচ্চামি কইরা ফালাইছ, কোনটা বলো তো?

-আনিকাআআআ..

-আমার উপর চিল্লাইয়া কী লাভ? কোনোকিছু করার সময় তো হুঁশ থাকে না। আর তুমি এমন ক্যান বলো তো?

-কেমন?

-এই যে, এই ঘটনাটা আমাকে বলার কী দরকার ছিল বলো তো? জানোই তো এমন কিছু শুনলে আমার খারাপ লাগবে।

-তুমিই না আমাকে বলছ তোমাকে সবসময় সত্যিটা জানাতে।

-উফফফফ সাদিক! তোমার এই সত্যি বলা আমাকে সত্যি-সত্যিই একদিন পাগল করে ছাড়বে। তোমার আর সত্যি বলা লাগবে না।

-আচ্ছা, আর বলব না।

তারপর আরো একসপ্তাহ কেটে গেল। ছুটির দিন সকালে আমি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি। আনিকার ফোনে ঘুম ভাঙল।

উত্তেজিত কন্ঠে বলল, 'সাদিক, এইগুলা আমি কী শুনছি?'

আমি চোখ ডলতে ডলতে বললাম, 'কী শুনছ?'

-তুমি নাকি বিয়ে করতেছ?

-না তো! কে বলছে? এইগুলা মিথ্যা কথা, একদম পাত্তা দিবা না।

-সাদিক, মিথ্যা কথা না। তোমার নিজের বোন আজকে সকালে আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে গেছে। ও নাকি কতবার তোমাকে আমার কথা বাসায় বলতে বলছে, তুমি না-কি বলো নাই?

মনে হচ্ছে ধরা পড়ে গেলাম। এখন আর মিথ্যা বলে লাভ নাই। আমি বিরস মুখে বললাম, 'হুম, যা শুনছ সত্যি।'

-বাহ্ বাহ্..তা আমার সাথে কেনো তুমি এমনটা করলা জানতে পারি? আমার অপরাধটা কী?

-তোমারই তো দোষ।

-মানে?

-গত সপ্তাহে রাজশাহী থেকে ফেরার সময় তুমিই না বললা আমার আর সত্যি কথা বলার দরকার নাই।

-তোহ্?

-তোহ্ আবার কী! তারপর থেকে আমি সব মিথ্যা বলতেছি। ঐদিন বসকে বললাম আমার নানা মারা গেছে, অথচ আমি পাত্রী দেখতে যাচ্ছি। তোমাকে বললাম অফিসে অনেক কাজের চাপ, কথা বলার সুযোগ নাই, অথচ তখন আমি পাত্রীর সাথে আলাদা করে কথা বলতেছি। বিয়ে ঠিক করার আগে বাসায় জিজ্ঞেস করল আমার পছন্দের কেউ আছে কি-না। আমি বললাম, এসবের প্রশ্নই আসে না..আমি তো মেয়েদের চোখের দিকে তাকিয়ে ভালো করে কথাই বলতে পারি না।

আমি কথাটা শেষ করতে না করতেই ঐপাশে মোবাইলটা আছাড় দেয়ার শব্দ পেলাম। বুঝলাম না মেয়েটা হঠাৎ এত রেগে গেল কী জন্য! আমি তো ওর কথাতেই সব করলাম। দামী ফোনটা এভাবে ভেঙে ফেলল? ও তো ফোনটাকে ভালোবাসত।

সত্যি মিথ্যা



Rajib Debnath



No comments

Powered by Blogger.